ঘুমের আযকারের হেকমত কী ? ঘুমালে দেহ থেকে কি রুহ পৃথক হয়?

 


ঘুমের আযকারের হেকমত কী ?
ঘুমালে  দেহ থেকে কি রুহ পৃথক হয়?

ঘুমামানোর আগের আজকারগুলোর হেকমত হলো রুহ ও আকলে প্রশান্তি আনা এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করা, যাতে ঘুমের সময় দেহ ও মন নিরাপদ থাকে এবং উভয়ের কাজে ভারসাম্য থাকে।


যদি এটা সম্পন্ন হয় তাহলে আমরা আরামে ঘুমাতে পারি এবং শান্তি পাই।


কারণ আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের রুহ আমাদের শরীর থেকে পৃথক হয়।


 এখানে বলে রাখা ভালো , ঘুমের সময় রুহ শরীর থেকে পৃথক হয়, তবে একেবারেই পৃথক হয় না। পুরোপুরি পৃথক হয় মৃত্যুর সময় । সুতরাং যদি এই আযকার দ্বারা সুরক্ষিত হয় , তাহলে আল্লাহ তাআলা একে সুরক্ষা দেন, যেভাবে সুরক্ষা দেন তার সালিহ বা সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে।

তখন ঘুম থেকে জাগ্রত হলে দেহমন প্রফুল্লতা এবং ফ্রেশনেস কাজ করে।

তারপর যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন শয়তানের দেয়া একটি গিট খুলে যায়, যা সে ঘারে প্রদান করেছিল। তারপর যখন ওযু করা হয় তখন আরেকটা গীট খুলে যায়। এরপর যখন দুই রাকাত নামাজ পড়া হয় তৃতীয় গিট‌ও খোলে যায়। তখন দেহমনে সজীবতা ও প্রফুল্লতা আসে । আর যদি আযকার আদায় করা ছাড়া ঘুমিয়ে যাওয়া হয় , শয়তান তখন পেয়ে বসে , কষ্ট দেয় উত্ত্যক্ত করে, কষ্ট দেয় । তখন ঘুম থেকে জাগলে শরীরে ও মনে অবসাদ লাগে। যেনো এতক্ষণ সে কোথায় আটকে ছিলো এবং অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলো।

তারপর ঘুম থেকে উঠে যদি আল্লাহকে স্মরণ না করে,অজু না করে,সালাত আদায় না করে তাহলে কষ্ট আরো বৃদ্ধি পায় এবং ঘুমানো সত্বেও দেহমনে অবসাদ লেগে থাকে। ঘুম তো আমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল দেহমনের প্রশান্তির জন্য। কিন্তু ঘুমানোর আগের এবং পরের আযকার ঠিকমতো না করার কারণে এই অবস্থাগুলো হয়।


 আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েছেন তা গ্রহণ না করলে আমাদেরই দোষ। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি দয়াশীল।সুতরাং ঘুমানোর আগের এবং পরের আযকারগুলো প্রতিটি মুসলিমের যত্নের সাথে আদায় করা উচিত। নিজে শিখতে হবে এবং পরিবারকে অভ্যস্ত করাতে হবে।আল্লাহতালা আমাকে এবং আপনাদেরকে তাওফিক দান করুন।


ঘুমের সময় দেহ থেকে রুহ পৃথক হয় এটা কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।


اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

অর্থ: আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

(সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৪২)


وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُمْ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ


অর্থ : আর সেই মহান সত্তা রাতে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম কর তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।

(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৬০)


بَاب وَضْعِ الْيَدِ الْيُمْنٰى تَحْتَ الْخَدِّالأَيْمَنِ حَدَّثَنِي مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ رِبْعِيٍّ، عَنْ حُذَيْفَةَ ـ رضى الله عنه قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ مِنَ اللَّيْلِ وَضَعَ يَدَهُ تَحْتَ خَدِّهِ ثُمَّ يَقُولُ ‏"‏ اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا ‏"‏‏.‏ وَإِذَا اسْتَيْقَظَ قَالَ ‏"‏ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ ‏"‏‏


হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ সে আল্লাহর জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান। [৬৩১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬২)


গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)

অধ্যায়ঃ ৮০/ দু‘আসমূহ (كتاب الدعوات)

হাদিস নম্বরঃ ৬৩১৪



وعن أبي جحيفة رضي الله عنه قال : ( كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرِهِ الَّذِي نَامُوا فِيهِ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَقَالَ : إِنَّكُمْ كُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيْكُمْ أَرْوَاحَكُمْ ، فَمَنْ نَامَ عَنْ صَلاةٍ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا اسْتَيْقَظَ ، وَمَنْ نَسِيَ صَلاةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَ ) رواه أبو يعلى في " المسند " (2/192)، وصححه الألباني في " إرواء الغليل " (1/293)

আবু হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ঘুমিয়ে ছিলেন এমনকি সূর্য উদয় হয়ে যায়। তখন বললেন তোমরা মৃত ছিলে অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তোমাদের নিকট তোমাদের রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নামাজের সময় ঘুমিয়ে থাকবে (জাগরণ না পাওয়ার কারণে) সে যখন জাগ্রত হবে তখন নামাজ পড়ে নিবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যাবে,তার যখন স্মরণ আসবে সে তখন নামাজ পড়ে নিবে। 

আবু ইয়ালা তাঁর মুসনাদে বর্ণণা করেন।

2/192।হাদিসটি সহিহ ।



এ বিষয়ে আরো জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

https://islamqa.info/ar/160880


selfruqyah.com



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url